Back to Articles

প্রকৃত ইসলাম কি

September 30, 20250 min read24 views


ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। স্রষ্টার প্রতি বিনীতভাবে অনুগত হয়ে, অর্থাৎ আল্লাহতে আত্মসমর্পণ করে, সৃষ্টির সাথে একাত্মতা স্থাপন করার নামই ইসলাম। মহান আল্লাহ্ বলেন-

 

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِى نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ ، وَاللَّهُ رَبُّوْفٌ بِالْعِبَادِ

 

[উচ্চারণ: ওয়া মিনান নাসি মাইয়াশরী নাফসাহুব তিগাআ মারদ্বাতিল্লাহি, ওয়াল্লাহু রাউফুম বিল'ইবাদ ।]

 

অর্থাৎ: "মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের নক্সকে বিকিয়ে দেয়। আর আল্লাহ্ তো তাঁর বান্দাদের প্রতি পরম স্নেহশীল।” (সূরা-আল বাকারাহ-২: আয়াত-২০৭)

 

প্রকৃতপক্ষে মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ জীবন যাত্রার জন্য পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, কিংবা আইনগত ব্যবস্থা প্রণয়নের প্রয়োজন হয় না। কারণ অন্যান্য প্রাণী স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহ্ নির্দেশিত পথে পরিচালিত। মানুষ যখন নক্স তথা জীবাত্মার তাড়নায় পরিচালিত না হয়ে, আল্লাহ্র নির্দেশিত পথে নিজেকে পরিচালিত করবে, তখন স্বাভাবিক নিয়মেই শান্তি লাভ করবে। যে কারণে অশেষ দয়াময় আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের নির্দেশ করেছেন-

 

يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً مِن وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوْتِ الشَّيْطَنِ وَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

 

[উচ্চারণ: ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানুদ খুলু ফিস সিলমি কাফফাতান, ওয়ালা তাত্তাবি'উ খুতুওয়াতিশ শাইত্বানি, ইন্নাহু লাকুম 'আদুওউম মুবীন ।]

 

অর্থাৎ: “হে মু'মিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো, এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা-আল বাকারাহ-২: আয়াত-২০৮)

 

এ কারণে সৃষ্টির আদি থেকে মহিমান্বিত আল্লাহ্ একে একে নবী ও রাসুলদের প্রেরণ করে আসছেন, যেন এ সকল মহামানব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ইসলামের মর্মবাণী, অর্থাৎ শান্তির বিধান প্রচার করেন, এবং মানুষের অন্তরে শান্তি পৌঁছে দিয়ে, ইসলাম যে বাস্তবিকই শান্তির ধর্ম, তা উপলব্ধি করার সুযোগ করে দেন।

 

এরই ধারাবাহিকতায় মহান আল্লাহ্ নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে যুগের ইমাম, মোজাদ্দেদ ও আওলিয়ায়ে কেরামকে প্রেরণ করে, তাদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম যে শান্তির ধর্ম, মুক্তিকামী মানুষকে এটি উপলব্ধি করার সুযোগ করে দেন।

 

প্রকৃতপক্ষে অন্ধকার রাতে যে ব্যক্তির কাছে জ্বালানো বাতি রয়েছে, তার কাছে গেলে যেমন আলো পাওয়া যায়, তেমনি পথভ্রষ্টতার অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং ষড়রিপুর বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে অশান্তির জাঁতা কলে পিষ্ট মানুষ যখন শান্তির দূত মহামানবের সহবত লাভ করে, তখন সে শান্তির সন্ধান পেয়ে যায়। আল্লাহ্ বলেন-

 

قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسَلَّمٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَى

 

[উচ্চারণ :কুলিল হামদুলিল্লাহি ওয়া সালামুন 'আলা 'ইবাদিহিল্লাযীনাস ত্বাফা।]

 

অর্থাৎ: “হে রাসুল (সাঃ)! বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই। আর শান্তি তো বর্ষিত হয় তাঁর ঐ বান্দাদের উপর, যাঁদেরকে তিনি মনোনীত করেছেন।” (সূরা-আন নামল-২৭: আয়াত-৫৯)

 

সুতরাং মানুষ যখন আল্লাহ্র মনোনীত মহামানবের দেয়া বিধান অনুসরণ করে ষড়রিপুর শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়, অতঃপর সকল অন্যায় কর্ম থেকে বিরত থাকে, আর সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ্র পরিচয় লাভ করে, এবং তাঁর উপর পূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে নিজেকে সর্বোত্তম পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়, তখনই নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে- মূলত এটিই ইসলাম। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ)

 

এরশাদ করেন-

 

وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هُهُنَا وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِئٍ مِّنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ

 

[উচ্চারণ: ওয়া কুনু 'ইবাদাল্লাহি ইখওয়ানান আলমুসলিমু আখুল মুসলিমি লা ইয়াজ্বলিমুহু ওয়ালা ইয়াখযুলুহু ওয়ালা ইয়াহক্বিরুহ্ আত্তাক্বওয়া হাহুনা ওয়া ইউশীরু ইলা সাদরিহী ছালাছা মাররাতিন বিহাসবিমরিইম মিনাশ শাররি আইয়্যাহক্বিরা আখাহুল মুসলিমা কুলুল মুসলিমি 'আলাল মুসলিমি হারামুন দামুহু ওয়া মালুহু ওয়া 'ইরদুহু।]

 

অর্থাৎ : “হে আল্লাহ্র বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সুতরাং সে তার ভাইকে নির্যাতন করতে পারে না, হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে না, এবং অপমানিত-অপদস্থও করতে পারে না। অতঃপর আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) নিজের ক্বালবের দিকে ইশারা করে, পর পর তিনবার বললেন- তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে। আর কোন ব্যক্তির খারাপ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, ধনসম্পদ এবং মানসম্মান (বিনষ্ট করা) অপর সব মুসলমানের উপর হারাম।” (মুসলিম শরীফের সূত্রে রিয়াদুস সালেহীন-১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৫৩, হাদীস নং-২৩৫)

 

সুতরাং যে মত ও পথ অনুসরণ করলে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে সক্ষম হয়, তাকেই প্রকৃত ইসলাম বলা হয়।




Share this article:

More Articles You May Like

অলী-আল্লাহুর সাহায্য চাওয়া শিরক কি না
ইসলামী আকিদাহ
October 19

অলী-আল্লাহুর সাহায্য চাওয়া শিরক কি না

আল্লাহর ইবাদতে কাউকে শরীক করা শিরক, কিন্তু আওলিয়ায়ে কেরাম বা আল্লাহর বন্ধুদের উসিলা গ্রহণ করা শিরক নয়।

Read More
কিভাবে ঈমানদার হওয়া যায়
ইসলামী আকিদাহ
October 11

কিভাবে ঈমানদার হওয়া যায়

প্রকৃত ঈমান একটি আলোকিত নূর, যা নবী, রাসুল এবং আওলিয়ায়ে কেরামের অন্তরে সংরক্ষিত থাকে। যেমন একটি নারী তাত্ত্বিক জ্ঞান দ্বারা নয়, বরং বাস্তব প্রক্রিয়ার ...

Read More
আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক কি না
ইসলামী আকিদাহ
October 5

আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক কি না

ইবাদতে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করাকে শিরক বলা হয়। তবে জীবনের প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নেওয়া শিরক নয়। নেক কাজে একে অপরকে সাহায্য করা ইবাদতের অংশ, আর প...

Read More